দুবাই ডিউটি ফ্রি টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গত শনিবার স্তেফানোস চিচিপাসকে হারিয়ে জীবনের শততম এটিপি খেতাব
জিতেছেন রজার ফেদেরার। ট্রফি জেতার সেঞ্চুরি করলেও এক সময় ভাবতেন, প্রতিভা থাকার পরও কোনো ট্রফি না জিতেই
তাকে চলে যেতে হবে এ ময়দান ছেড়ে।
সুইস এই মহাতারকা জানান, একটা সময় ভাবতেন, জীবনে একটাও এটিপি খেতাব জিততে পারবেন না। ভেবেছিলেন সবাই তার
সম্পর্কে বলবে, ‘ছেলেটার প্রতিভা ছিল কিন্তু ট্রফি জেতেনি।’
আঠারো বছর আগে ফেদেরার চ্যালেঞ্জারের বাইরে প্রথম সিঙ্গলস খেতাব জেতেন। সেখান থেকে দুবাইয়ে জিতেছেন একশো
নম্বর ট্রফিটি! এটিপি-র ওয়েবসাইটে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বললেন, ‘মজা করছি না। একটা সময় ভাবতাম লোকেরা
আমার সম্পর্কে শুধু বলবে, প্রতিভা ছিল কিন্তু ট্রফি জেতেনি।’
মার্সেইয়ে জীবনের প্রথম এটিপি ফাইনালে ফেদেরার হেরেছিলেন নিজ দেশের মার্ক রসের কাছে। এ নিয়ে সর্বকালের অন্যতম
সেরা খেলোয়াড় ফেদারার বলেনম, ‘ফাইনালে হেরে কেঁদে ফেলেছিলাম। মার্ক সান্ত্বনা দিয়ে বলে, জীবনে অনেক ট্রফি জিতবে।
উত্তর দিই, তোমার পক্ষে কথাটা বলা খুব সহজ।’
মার্সেইয়ের ফাইনালের পরে নিজের শহর বাসেলেও হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান রজার। অবশেষে উনিশ বছর বয়সে প্রথম
এটিপি ট্রফি পান মিলানে। ‘এখন ভাবলে অবাক হয়ে যাই। তখন ট্রফির জন্য পাগল ছিলাম। জিততে পারলাম মিলানে। যে জয়ের
পরে মনে হয়েছিল, বাঁচলাম! আমাকে নিয়ে অন্তত আর কেউ বলবে না, প্রতিভা থাকলেও ট্রফি জেতেনি,’ বলেছেন ফেদেরার।
যোগ করেছেন, ‘ভাবুন, সেখান থেকে আজ একশোটা ট্রফির মালিক। বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
সাক্ষাতকারে নিজের জীবনের এসব কষ্ট-আনন্দের তথ্যের সাথে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ফেদেরার। জানিয়েছেন,
টেনিস জীবনের শুরুতে প্রতিযোগিতার প্রথম দিকে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করে ফেলতেন। তাই কোয়ার্টার ফাইনালের পরে টানতে
পারতেন না।
‘আস্তে আস্তে ভুল বুঝলাম। পাঁচ দিন টানা ম্যাচ খেলার মতো তৈরি করলাম নিজেকে। সেই সময় ফাইনাল হত পাঁচ সেটের। তবে
যতটুকু যা করতে পেরেছি তার জন্য কৃতিত্ব আমার টিমের। ওরাই আমাকে সুস্থ রেখে টানা খেলার মতো তাজা করে রাখত। আমি
আজ যা, তার সবই ওদের জন্য।’
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮,শনিবার
রটারডাম ওপেনের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে আবারো বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের
শীর্ষস্থান দখল করেছেন রজার ফেদেরার। ৩৬ বছর ১৯৬ দিন বয়সে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দল করে তিনি এই তালিকায়
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তারকা আন্দ্রে আগাসিকে পিছনে ফেলেছেন।
২০ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজীয় ফেদেরার শেষ আটে নেদারল্যান্ডের রবিন হাসেকে ৪-৬, ৬-১, ৬-১ গেমে পরাজিত করে
রটারডাম ওপেনের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন, পাশাপাশি রাফায়েল নাদালকে হটিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে আসীন হন।
ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত ফেদেরার বলেছেন, ‘আমি সত্যিই অভিভূত, আবারো শীর্ষস্থানে ফেরাটা আমার কাছে অনেক কিছু। আমি
সত্যিই দারুণ খুশি। কখনই ভাবিনি আবারো এক নম্বরে উঠতে পারবো। এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি
মুহূর্ত।’
২০০৩ সালে ৩৩ বছর, ১৩১ দিন বয়সে আগাসী বিশ্বের এক নম্বর স্থানটি দখল করেছিলেন। তার থেকে আরো তিন বছর এগিয়ে
ফেদেরার এখন সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন। এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে
প্রথমবার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে তা ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন সুইস এই সুপারস্টার।
ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় এই মুহূর্তে নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। সমর্থকদের ভালবাসায় সিক্ত
ফেদেরার আরো বলেছেন, ‘শীর্ষস্থানে ফেরাটা একজন টেনির খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ অর্জন। আর বয়স বেড়ে গেলে অন্যের
তুলনায় পরিশ্রমটাও দ্বিগুন করতে হয়। বিশেষ করে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য দারুণ কষ্ট করতে হয়। এটা সত্যিকার
অর্থেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতই ঘটনা। এই যাত্রাটাও দারুণ ছিল, এখানে আমি ১৯৯৮ সালে প্রথম ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছিলাম।
আবারো এখানে এই কৃতিত্ব অর্জন সত্যিই বিশেষ কিছু।’
ফেদেরারকে অভিনন্দিত করার তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে ছিলেন আগাসি। টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘৩৬ বছর ১৯৬
দিন… রজার ফেদেরার টেনিসকে আরো অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আরেকটি দারুণ অর্জনের জন্য তোমাকে অভিনন্দন।’
অথচ গত বছর হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পরে ফেদেরারের সামনে নতুন কিছু অর্জনের শঙ্কা ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব
র্যাঙ্কিংয়ে ১৭তম স্থানে ছিলেন ফেদেরার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা জিতে তিনি নিজেকে আবারো লড়াইয়ে ফিরিয়ে
আনেন। সেই মুহূর্তগুলো মনে করে ফেদেরার বলেন, ওই সময়টা আমি দারুণ কষ্ট করেছি। গত বছর আমাকে অনেক ম্যাচ
জিততে হয়েছে।
গত ১৩ মাসে তিনটি মেজর টুর্নামেন্ট জয়ই ফেদেরারকে আবারো শীর্ষে ফিরিয়ে এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন।