ঢাকা: বাংলা নববর্ষের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানাতে এদিন নতুন পোশাক গায়ে
তুলতে চান প্রায় সব বয়সী সব শ্রেণীর মানুষ। তবে পহেলা বৈশাখের সময় ঘনিয়ে এলেও রাজধানীর কেনাকাটার বাজার এখনও
সরগরম হয়ে উঠেনি। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে সে চিত্রই পাওয়া গেছে।
তবে আসন্ন দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে, মার্কেটে আসা লোকজনের পদচারণায় সেরকমই আভাস দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
শাহবাগ স্টাফ কোয়ার্টারের ফারিয়া রশীদ আজিজ মার্কেটে এসেছেন তিন বছরের ছেলের জন্য নববর্ষের পোশাক কিনতে। বেশ
কিছু দোকান ঘুরে যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, পছন্দ হয়েছে। তবে বাচ্চাদের পোশাকের দাম একটু বেশি
মনে হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন এসে কিনে নিয়ে যাবো।
তার মতো আজিজ মার্কেটের দোকানদাররাও বসে আছেন পহেলা বৈশাখের আগের দিনের অপেক্ষায়। তাদের ভাষ্য বৈশাখের
কেনাকাটা মূলত হবে ১২ ও ১৩ এপ্রিল। এখন বলতে গেলে ক্রেতাশূন্য আজিজ মার্কেট। এক সময় বইয়ের দোকানের জন্য
পরিচিতি পেলেও এখন সে জায়গা দখল করেছে পোশাকের দোকান। মার্কেটের এক থেকে তিনতলা পর্যন্ত বিভিন্ন নামিদামি
পোশাকের দোকানে ছেয়ে গেছে পুরো আজিজ মার্কেট। আর বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে মার্কেটের দোকানগুলোতে এখন নতুন
নতুন কালেকশনের সমারোহ।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেলো এবার বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী সাদা-লাল রংয়ের বাইরেও হলুদ, বেগুনি, নিলসহ চড়া রঙের পোশাকের
প্রধান্য রয়েছে। নিল ক্রাফ্টের ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন জানান, বাচ্চাদের সিঙ্গেল কামিজ আমরা বিক্রি করছি ৫৮০ থেকে
৮০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বাচ্চাদের পায়জামা-পাঞ্জাবি সেট ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় আমাদের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। এবার
এমনভাবে কাপড়ের ডিজাইন করা হয়েছে যাতে বৈশাখের বাইরেও বছরের অন্যান্য সময়ে তা পড়া যায়।
বৈশাখে মেয়েদের পোশাক বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। আজিজ মার্কেটের প্রায় সব দোকানেই মেয়েদের কাপড়ের সংগ্রহ চোখে
পড়ার মতো। নোঙরের সাদিয়া ইসলাম জানান, সালোয়ার-কামিজ এবার ১,১০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরাবরই
আমরা বৈশাখে সূতি বা কটনের উপর ডিজাইন করে থাকি। এবার শুধু আমরা না সবাই তাই করেছে। যেহেতু বৈশাখের সময়
গরম থাকে তাই, এ বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। এছাড়া এবার রংয়েও বৈচিত্র্য এসেছে। লাল-সাদার বাইরে বিভিন্ন রঙের
সালোয়ার এবং শাড়ি দেখতে পাবেন। শাড়ির দাম এবার ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে।
ছেলেদের পাজামা-পাঞ্জাবির বাইরে আজিজ মার্কেটে বৈশাখের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ হলো টি-শার্ট। রাজধানীর
বিপনিবিতানগুলোর মধ্যে আজিজ মার্কেটেই বৈশাখী টি-শার্টের সবচেয়ে বড় কালেকশন আছে। সাদা কাপড়ের উপর বাহাড়ি
লক্ষ্মীপেঁচাসহ বৈশাখের সব মোটিভ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফ্যাশন হাউজ বৃত্তের কর্ণধার সোহেল আহমেদ বাংলানিউজকে
বলেন, আজিজ মার্কেটে টি-শার্টের মাধ্যমেই পোশাকের দোকানের সমারোহ শুর হয়। ফলে টি-শার্ট এখানকার দোকানগুলোতে
সব সময় প্রধান্য পায়। ঈদ থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ সব উৎসবকে কেন্দ্র করেই আমরা টি-শার্টের কালেকশান সাজাই।
আমাদের এখানে বৈশাখের টি-শার্ট ২৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে পাঞ্জাবির দাম ৮০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে রয়েছে বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।
আজিজ সুপার মার্কেটে কয়েকটি দোকানে কাঠ মেটালের গহনাও পাওয়া যায়। বৈশাখকে উপলক্ষ্য করে গহনার নতুন নতুন
সংগ্রহ পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে বৈশাখের বাহারি গহনা পাওয়া যাবে।
তবে প্রায় ক্রেতাশূন্য আজিজ মার্কেটের দোকানদাররা অপেক্ষায় আছেন সামনের দিনগুলোতে বিক্রি ভালো হবে। তাদের আশা
পহেলা বৈশাখ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও আসবে। দেশাল, বৃত্ত, লণ্ঠ, নক্ষত্র, ঢাকঢোলের মতো নান্দনিক নামের
দোকানগুলো নান্দনিক পোশাকের সমারোহে রাঙাতে চায় এবারের বৈশাখ।